Header Ads

২২ বছরেও তুলনামূলক ভাবে কেন বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে পিছিয়ে?

 ২২ বছরেও তুলনামূলক ভাবে কেন বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে পিছিয়ে?




বাংলাদেশ নিজেদের আইসিসির পূর্ণ সদস্যর পদ লাভ করেছে টেস্ট খেলার স্বীকৃতি পাওয়ার মাধ্যমে। যা বাংলাদেশ পেয়েছে আজ থেকে ২২ বছর আগে ২০০০ সালে। কিন্তু প্রায় ২ যুগ ধরে টেস্ট খেললেও এখনো তেমন কোন উন্নতি করতে পারে নি ৫ দিনের ক্রিকেটে। 

বাংলাদেশ ২০০০ সালে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে নিজেদের টেস্ট অভিশেক করে এবং এর পরে খেলে ফেলেছে একে একে প্রায় ১৩৪ টেস্ট ম্যাচ। যেখানে জয়ের সংখ্যা মাত্র ১৬ টি এবং এর সাথে ১৬টি ড্র রয়েছে এবং হারের দিক থেকে ১০০ ম্যাচ হেরে সবচেয়ে কম ম্যাচ খেলে ১০০ হারের রেকর্ড নিজেদের নামে করে নিয়েছে বাংলাদেশ। 

২০০০ সালে ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ১০-১৩ নভেম্বর ওবং এই ম্যাচটিতে বাংলাদেশ প্রায় জিতেই গেয়িছিল। উক্ত ম্যাচে টসে জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংস এ ব্যাট করতে এসে ৪০০ রানের বড় সংগ্রহ পায় টিম টাইগার্স এবং বল হাতেও বেশ ভালো ছিলেন টাইগার বোলাররা। 

ভারত এর বিপক্ষে ৪০০ রান করে আল আউট হয়ে গেলে ব্যাটিং এ আসে ভারত এবং তারাও ভালো খেলে ৪২৯ রান করে জবাবে বাংলাদেশ ২য় ইনিংসের জন্য ব্যাটিংয়ে আসলে কোন ভাবেই দাড়াতে পারে না ভারতীয় বোলার দের মূখে এবং মাত্র ৯১ রানে গুটিয়ে যায় টিম বাংলাদেশ।  

জবাবে ভারত এর সামনে ছিল ৬৩ রানের একবারে সহজ টার্গেট যা ভারত তুলে নেই মাত্র ১ উইকেট হারিয়ে আর এভাবেই বাংলাদেশ প্রথম আন্তর্জাতিক টেস্ট ম্যাচে টাইগারদের ৯ উইকেটের বড় পরাজয় উপহার দেয় ভারত। আর এভাবেই পথ চলা শুরু হয় আমাদের দেশের টেস্ট ক্রিকেটের। এর পরে প্রায় ২ যুগ বা ২২ বছর চলে গেলেও একটুও উন্নতি হয়নি এই ৫ দিনের ক্রিকেটে৷ 

চলতি বছরে বাংলাদেশ ৫ দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে  ৮ টি যেখানে ১ টি জয় এর বিপরীতে রয়েছে ৬ টি পরাজয় আর এইগুলোর প্রায় সবই ছিল ইনিংস ব্যবধানে। আর সাথে রয়েছে একটি ড্র। ২০২২ সালের প্রথমদিন থেকে শুরু হওয়া নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট এ অসাধারণ এক জয় তুলে নেই টিম টাইগার্স কিন্তু ঠিক এর পরের ম্যাচেই আবার নিজেদের আসল রূপ দেখায় বিশ্বকে ইনিংস ব্যবধানে ম্যাচ হেরে। 

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের টেস্ট র‍্যাংকিং এ সেরা ৫ এই আসা হয়নি যেখানে টাইগারদের সব থেকে ভালো আবস্থান ছিল ২০১৮ সালে ৮ নাম্বার যেটা বর্তমানে ১০ তম। আইসিসি থেকে ১০ম দল হিসেবে পূর্ণ সদস্যর মর্যাদা পায় বাংলাদেশ এবং এর পায় ১৮ বছর পরে ২০১৮ সালে টেস্ট খেলার মর্যাদা পায় আফগানিস্তান ক্রিকেট কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে এসে নিজেদের ৩য় ম্যাচেই বাংলাদেশ এর সাথে জয় পায় রশিদ খানের আফগানিস্তান। যেখানে বাংলাদেশ এর প্রথম টেস্ট এ জয় পেতে সময় লেগেছিল ৫ বছর। আরো অবাক করার মতো বিষয় হচ্ছে যে আফগানিস্তান টেস্ট ক্রিকেটে ৬ টা ম্যাচ খেলেছে এখন পর্যন্ত এবং তারা ৩ টি জয় ও ৩ টি পরাজয় এর দেখা পেয়েছে এবং এই দিক থেকে বাংলাদেশ যথেষ্ট পিছিয়ে রয়েছে। 

বাংলাদেশ এর টেস্ট ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক ক্রিকেটার অনেক কথা বলেছে এবং এদের মধ্য সব থেকে পরে ইংল্যান্ড এর সাবেক ক্রিকেটার কেভিন পিটারসন এক ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় বলেন তিনি ভবিষ্যৎ এ টেস্ট খেলার যোগ্যতা দেখছেন শুধু ৫টি দেশের এরা হচ্ছে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, পাকিস্তান ও সাউথ আফ্রিকা। 

যেখানে কেভিন পিটারসন বলেছেন যে বাংলাদেশ সহ বাকী দেশগুলোর টেস্ট খেলাই উচিত নয়। না এই দেশগুলোতে টেস্ট ক্রিকেট জনপ্রিয় না তাদের খেলার ধরন। এই কথা ছাড়াও বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট সম্পর্কে অনেক বদনাম রয়েছে। 

এই গুলোর মধ্যে সবথেকে আগে আসে বাজে পিচের কথা। আমাদের দেশের যে সকল পিচে টেস্ট ক্রিকেট খেলা হয় বিশেষ করে মিরপুরের শেরে বাংলা এর কথা বেশি উঠে আসে। কালো পিচ, নেই বাউঞ্চ, নেই হাই স্কোরিং ম্যাচ এবং সম্পূর্ণ স্পিন সহায়ক উইকেট। এই সকল কারনে বাংলাদেশে খেলোয়াড়েরা ৫ দিন খেলায় পায় না ফলে যখন কোন দেশে স্পোর্টিং উইকেটে খেলে বলই বুঝতে পারে না টিম টাইগার্স। 

এছাড়াও সবথেকে বড় যে সমস্যা আমাদের টেস্ট ক্রিকেটে তা হচ্ছে দল নির্বাচন। আমাদের দেশের ক্রিকেট রীতি অনুযায়ী যে ক্রিকেটার এক ফরম্যাটে এ ভালো করবে তাকে বাকী ফরম্যাটে সুযোগ দেওয়া হয় যার ফলে নতুন ফরম্যাট এ খেলতে তো পারেই না অন্যদিকে ফর্মে থাকা ফরম্যাটেও নিজেদের ছন্দ হারায় যা এর আগেও আমরা দেখেছি। 

সঠিক দল নির্বাচন না হওয়ার কারনে আমরা টেস্ট এ আজ এতো পিছিয়ে। এক কথায় আমাদের শুধু টেস্ট স্পেশালিষ্ট কোন খেলোয়াড় এখনো তৈরি হয় নি যেখানে বিশ্বের বাকী দল গুলোর জন্য প্রত্যাক ফরম্যাটের জন্য আলাদা দল হয়েছে৷ একক ফরম্যাটে খেলানোর জন্য আলাদা স্পেশালিষ্ট খেলোয়াড় থাকলে দীর্ঘ সময় ধরে এদের থেকে ভালো খেলা পাবে দল। 

যেখানে বাকী দেশগুলো নিজেদের টেস্ট দলে পেসারদের বেশি প্রাধান্য দেয় সেখানে এখনো বাংলাদেশ সেই স্পিন সহায়ক পিচ ও ফেভারিট হিসেবে দাবি করে নিজেদের। আমাদের টেস্ট ক্রিকেটে এ উন্নতি না হওয়ার জন্য এই একটি কারনের অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে। 

বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা দিক হচ্ছে সঠিক অধিনায়ক এর অভাব। টেস্ট ক্রিকেটে সবথেকে বেশি পরিমানে রিভিউ ব্যবহার করা হয় এবং একজন শক্ত ও বুদ্ধিমান অধিনায়ক ছাড়া দল কোনভাবেই পরিচালনা করা সম্ভব নয়। 

এই বিষয়টি আমরা মমিনুল হকের বিষয়ে দেখেছি। বাংলাদেশের সাবেক টেস্ট ক্যাপ্টেন মমিনুল হক রিভিউ নেওয়াতে বা এর সঠিক ব্যবহার এ সবথেকে দুর্বল ছিল টেস্ট খেলা দেশ গুলোর অধিনায়কদের মধ্যে। এমন কি মাঠে মমিনুলকে আমরা অধিনায়কের ভাষায় কথাও বলতে কম দেখেছি। সাধারণ খেলোয়াড় থেকেও তিনি ছিলেন ব্যতিক্রম এবং একদম ঠান্ডা এবং এই রকমটা আসলে টেস্ট ক্রিকেটে যায় না। 

মমিনুল গেসে নতুন অধিনায়ক সাকিব এসেছেন কিন্তু দলের ফলাফল একি রয়েছে যার প্রধান কারন খেলোয়াড় দের ধারাবাহিক পারফরম্যান্স না করতে পারা। আমাদের দেশের বেশিরভাগ টপ অর্ডারের খেলোয়াড় দের অফ ফর্ম যাচ্ছেই না। ওপেনার তামিম ভালো করলেও তার সংগ দেওয়ার মতো শক্ত ওপেনার এখনো বাংলাদেশ দল পায় নাই। যেখানে মাহমুদুল হাসান জয় দুই এক ম্যাচ ভালো করলেও এখনো তেমন ধারাবাহিক নয়। 

বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে এখন ধারাবাহিক ক্রিকেটারের সংখ্যা খুব বেশি নয়। লিটন দাস, তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান ও মুশফিক কোন মতে পারফর্ম করলেও বাকিরা এখনো ফিরতে পারে ধারাবাহিক ভাবে। 

বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট এর উন্নতির জন্য অনেক গুলো বিষয়ের ওপর নজর দেওয়ার দরকার আছে এবং সবথেকে বেশি যে বিষয় গুরুত্বপূর্ণ সেটা হচ্ছে প্রোপার স্পোর্টিং উইকেট বানিয়ে বেশি বেশি করে ঘরোয়া ক্রিকেট মনোযোগ দেওয়া। আলাদা আলাদা পিচে নিজেদের তৈরি করে নেওয়া যাতে যেকোনো পরিবেশ এ নিজেদের মানিয়ে নিয়ে ৫ দিনের ম্যাচ খেলতে পারেন তারা। 

এছাড়াও টেস্ট স্পেশালিষ্ট ব্যাটার ও বোলার দুইটারই দরকার সমানে সমানে এবং এর ফলে টেস্টের আলাদা টিম এই থাকবে এবং যার ফলে উন্নতি সম্ভব। এবং সবথেকে বেশি প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে খেলোয়াড়দের মানসিক ভাবে তৈরি করা। ৫ দিনের ক্রিকেটে ভালো করার জন্য প্রবল মানসিকতা তৈরি ও কঠর পরিশ্রম এর কোন বিকল্প নেই৷ 



এক কথায় বলা যায় টেস্ট ক্রিকেট এ উন্নতির জন্য লম্না সময় ওপেক্ষা ও কঠোর পরিশ্রম করাতে হবে প্রকত খেলোয়াড়দের দিয়ে। এছারা সঠিক উইকেট নির্বাচন ও নানা রকমের পরীক্ষা করাতে হবে খেলোয়াড়দের কে। এছাড়াও দল নির্বাচন ও সেরা একাদশে ভূমিকা রাখতে হবে স্পেশালিষ্ট খেলোয়াড় দের নিয়ে। এবং এভাবেই ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব বাংলাদেশ দলের টেস্ট ক্রিকেটে। 










একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ