২০০৭-২০২২ সকল টি২০ বিশ্বকাপ সংক্ষেপে
বর্তমানে ক্রিকেট বিশ্বে সবথেকে জনপ্রিয় ক্রিকেট ফরম্যাট ২০ ওভারের ক্রিকেট বা টি২০ । মুলত কম সময়ে বেশি রানের খেলার জন্য এই ফরম্যাট এর কথা প্রথম ভাবা হয় । একদিনের ক্রিকেট বা ওয়ান-ডে ম্যাচের জন্য আমাদের প্রায় ৮ ঘন্টা সময় লাগতো পুরো ম্যাচটি দেখতে কিন্তু এই সময় জন্য একদিনের ক্রিকেট থেকে ২০ ওভারের ক্রিকেটের কথা ভাবা হয় । ৩ ঘন্টায় একটা ম্যাচ হবে যেখানে পুরো ম্যাচ জুড়ে থাকবে পুরো উত্তেজনা ।
টি২০ ক্রিকেট আসার পরে থেকেই ফরম্যাট টি জনপ্রিয়তার দিক থেকে পেছনে ফেলেছে টেস্ট ও একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচকে এবং এই টি২০ ফরম্যাট এর ওপর ভর করেই এখন দেখা যাচ্ছে অনেক দেশের অনেক লিগ যেগুলোর মধ্যে ইন্ডিয়ার প্রিমিয়ার লিগ বা আইপিএল, অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাস লিগ, পাকিস্থান সুপার লিগ ও বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ অন্যতম ।
ইতিহাসের প্রথম টি২০ আন্তর্জাতিক ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল আজ থেকে ১৭ বছর আগে ২০০৫ সালের ১৭ ফেব্রুযারি অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের মধ্যে । যে ম্যাচের উত্তেজনা ছিল খুব বেশি যা কেউ ভাবতেও পারে নাই ।
টি২০ ফরম্যাট এর জনপ্রিয়তা বাড়তে দেখে এই ফরম্যাট এ বিশ্বকাপ আয়োজনের কথা ভাবে আইসিসি এবং করেও ফেলে ২০০৭ সাল থেকে । অর্থাৎ ফরম্যাট টি আসার মাত্র ২ বছরের মাথায় ক্রিকেট ভক্তরা এই ফরম্যাট এ বিশ্বকাপ দেখতে পায় ।
এক নজরে পরে নেওয়া যাক ২০০৭ থেকে ২০২২ টি২০ বিশ্বকাপ গুলোর বিষয়েঃ-
২০০৭ঃ- দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ২০০৭ সালে শুরু হয় সংক্ষিপ্ত ফরম্যাট এর প্রথম বিশ্বকাপ । ১২ দলের অংসগ্রহনে মোট ২৭ ম্যাচে শেষ করা হয় আসরটি । উক্ত আসরে অংশগ্রহন করা দলগুলো হলোঃ- ১. দক্ষিণ আফ্রিকা ২. ভারত ৩. পাকিস্থান ৪. শ্রীলঙ্কা ৫. বাংলাদেশ ৬. ইংল্যান্ড ৭. ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৮. অস্ট্রেলিয়া ৯. নিউজিল্যান্ড ১০. জিম্বাবুয়ে ১১. স্কটল্যান্ড ও ১২. কেনিয়া ।
কেপ টাউন, দুরবান ও জোহান্সবার্গ এই ৩ শহরে আয়োজন করা হয় আসরটির ২৭ ম্যাচ । উক্ত আসরে চ্যাম্পিয়ন দল হিসেবে ১ম শিরোপা ঘরে আনে ভারত । ফাইনালে পাকিস্থানকে হারিয়ে শিরোপা জিতে নেয় ভারত ।
আসটির সেরা খেলোয়াড় ছিলেন পাকিস্থানের শহিদ আফ্রিদী । সেরা উইকেট শিকারী ছিলেন উমর গুল ১৩ উইকেটের সাথে এবং সেরা রান সংগ্রহক ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তী ক্রিকেটার ম্যাথু হেইডেন ।
২০০৯ঃ- ইংল্যান্ডে ২০০৯ সালে হয়েছিল টি২০ বিশ্বকাপের ২য় আসরটি । ১২ দলের অংশগ্রহণে হয়েছি এটিও এবং এই অংশগ্রহণ নেওয়া দল গুলো হলেনঃ- ১. ইংল্যান্ড ২. বাংলাদেশ ৩. আয়ারল্যান্ড ৪. ভারত ৫. পাকিস্থান ৬. নেদারল্যান্ডস ৭. শ্রীলঙ্কা ৮. অস্ট্রেলিয়া ৯. ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১০. দক্ষিন আফ্রিকা ১১. নিউজিল্যান্ড ১২. স্কটল্যান্ড
আসর টি ৫ জুন – ২১ জুন ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ইংল্যান্ড এর ২ শহরের ৩ ভেনুতে হয়েছিল যেগুলো ছিল ১. লন্ডনের লর্ডস ও দ্যা ওভাল এ এবং নটিংহ্যাম এর ট্রেন্ট ব্রিড এ ।
আসরটির বিজয়ী দল হিসেবে প্রথমবারের মতো শিরোপা এর দেখা পায় পাকিস্থান । ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে ১৩৮ রানে থামিয়ে ৮ উইকেটের বড় জয় পায় । আসরের সেরা খেলোয়াড় ছিল তিলকরত্নে দিলশান যিনি উক্ত আসরের সেরা রান সংগ্রহকও ছিলেন ৩১৭ রানের সাথে এবং এবারের আসরেই সেরা উইকেট শিকারি ছিলেন পাকিস্থানের উমর গুল ।
২০১০ঃ- টি২০ বিশ্বকাপের ৩য় আসরটি হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজে ২০১০ সালের ৩০ এপ্রিল থেকে ১৬ মে পর্যন্ত । ১২ দল নিয়ে হাওয়া এই আসরের ম্যাচ সংখ্যা ছিল ২৭ টি । ২০১০ সালের এই বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করা দলগুলো হলোঃ- ১. ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২. ভারত ৩. পাকিস্থান ৪. বাংলাদেশ ৫. ইংল্যান্ড ৬. দক্ষিণ আফ্রিকা ৭. শ্রীলঙ্কা ৮. নিউজিল্যান্ড ৯. অস্ট্রেলিয়া ১০. জিম্বাবুয়ে ১১. আফগানিস্থান ১২. আয়ারল্যান্ড । অস্ট্রেলিয়াকে ফাইনালে হারিয়ে ২০১০ সালে হওয়া এই আসরে শিরোপা তুলে নেয় ইংল্যান্ড ।
এই আসরটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ক্যারিবিয়ান দ্বীপগুলোতে যেখানে ৩ দেশের ৩ ভেনুতে আয়োজন করা হয় আসরের ২৭ টি ম্যাচ । সেন্ট লুসিয়ার ড্যারেন স্যামি ক্রিকেট গ্রাউন্ড, বার্বাডোস এর কেনসিংটন ওভাল এবং গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়াম এ অনুষ্ঠিত হয়েছিল উক্ত ম্যাচ গুলো ।
আসরটির সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন ইংলিশ আলরাউন্ডার কেভিন পিটারসন এছাড়াও সবথেকে বেশি উইকেট শিকাড়ি ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান পেসার ডার্ক নানেস যিনি এই আসরে মোট ১৪ টি উইকেট তুলে নিয়েছিলেন এবং সবথেকে বেশি রান করে এই আসর টিতে শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তী ব্যাটার মাহেলা জয়াবর্ধনে।
২০১২ঃ- ১২টি দল নিয়ে ২০১২ সালে প্রথম বারের মতো টি২০ বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ পায় কোন এশিয়ার দেশ এবং এটি ছিল শ্রীলঙ্কা । তারা তাদের মাটিতে ২৭ ম্যাচের এই আসরটি আয়োজন করেন ১২টি দল নিয়ে । আসরটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১২ থেকে ৭ অক্টোবর ২০১২ পর্যন্ত । এই আসরে শিরোপা জিতে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাও আয়োজক শ্রীলঙ্কাকে ফাইনালে হারিয়ে ।
২০১২ বিশ্বকাপও হয়েছিল শ্রীলঙ্কার ৩ শহরের ৩টি স্টেডিয়ামে । আসরটি আয়োজিত হওয়া স্টেডিয়ামগুলো হলো ১. পাল্লেকেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, পাল্লেকেলে । ২. রানাসিংহে প্রেমাদাসা স্টেডিয়াম, কলম্বো । ৩. মহিন্দ রাজাপক্ষ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, হাম্বানটোটা ।
আসরটির সেরা খেলোয়ার বিবেচিত হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ান আলরাউন্ডার শেন ওয়াটসন এছাড়া আসরটির সবথেকে বেশি রান করা খেলোয়াড় ও ছিলেন তিনি ২৪৯ রানের সঙ্গে । এবং আসরটির সেরা উইকেট শিকারী ছিলেন শ্রীলঙ্কান স্পিনার আজান্তা মেন্ডিস ।
২০১৪ঃ- টি২০ বিশ্বকাপের ৫ম আসরটি আয়োজনের সুযোগ পায় এশিয়ার আরো একটি দেশ বাংলাদেশ । ৫০ ওভারের ক্রিকেটের পরে যেটা ছিল তাদের দেশে আয়োজিত কোন বিশ্বআসর । ২০১৪ সালের ১৬ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত খেলা হয়েছিল এই আসরের । এই আসরে সকল ম্যাচ মিলিয়ে ৬ লক্ষ ৬৭ হাজার ৫৪৩ জন দর্শক দেখেছিল যা গড় হিসেবে প্রতি ম্যাচে হয় ১৯ হাজার ৭৩ জন । ভারতকে ফাইনালে হারিয়ে এই আসরের শিরোপা তুলে নেয় শ্রীলঙ্কা এবং এটিই ছিল তাদের প্রথম টি২০ শিরোপা ।
আগের ৪ আসরের মতো এই বিশ্বকাপও অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের ৩ শহরের ৩ স্টেডিয়ামে।
১. শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম, ঢাকা ।
২. জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম, চট্টগ্রাম।
৩. সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, সিলেট।
আসরটির সেরা খেলোয়াড় ছিলেন ভারতের ভিরাট কোহলি এবং সেরা রান সংগ্রহক ছিলেন ভিরাটই ৩১৯ রানের সাথে অপরদিকে এই আসরের সবথেকে বেশি উইকেট পাওয়া বোলাররা ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ইমরান তাহির এবং নেদারল্যান্ডস এর আহসান মালিক ১২ উইকেটের সঙ্গে ।
২০১৬ঃ- প্রথমবারের মতো টি২০ বিশ্বকাপ আয়োজন করে এশিয়ার দেশ ভারত এবং এই আসরটিতে চ্যাম্পিয়ন দল হিসেবে নিজেদের ২য় টি২০ বিশ্বকাপের শিরোপার দেখা পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং তারা ফাইনালে হেরে যাওয়া ম্যাচ এ জয় পায় ইংল্যান্ড এর বিপক্ষে । আসরটি হয়েছিল ২০১৬ সালের ৮ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত । এই আসরেও অংশগ্রহণ করেছিল ।
আসরটি অয়োজন করা হয়েছিল ভারতের ৬ শহরের ৬ আলাদা ভেনুতে এবং এই গুলো হলোঃ-
১. এম. চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম, বাঙ্গালর।
২. হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট সংস্থা স্টেডিয়াম, হিমাচল প্রদেশ।
৩. পাঞ্জাব ক্রিকেট সংস্থা স্টেডিয়াম, মাহালি।
৪. ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম, মুম্বাই।
৫. বিদর্ভ ক্রিকেট সংস্থা স্টেডিয়াম, নাগপুর।
৬. অরুন জেটলি স্টেডিয়াম, দিল্লি।
আসরটির সেরা খেলোয়ার ছিলেন এবার ও ভিরাট কোহলি এবং সেরা রান করা ব্যাটার ছিলেন বাংলাদেশের তামিম ইকবাল খান । এবং ২০১৬ সালের টি২০ বিশ্বকাপে সবথেকে বেশি উইকেট নিয়েছিলেন আফগানিস্থানের মোহাম্মদ নাবী ।
২০২১ঃ- প্রায় ৫ বছর পরে আবারো আয়োজন করা হয় টি২০ বিশ্বকাপ .প্রথমে ২০২০ সালে ভারতে করার কথা থাকলেও করোনা মহামারির জন্য তা আর সম্ভব হয়ে উঠেনি তাই ২০২১ সালে ভারত থেকে আসরটি নিয়ে যাওয়া হয় আরব আমিরাত ও ওমানে । যেখানে বাছাই পর্বের কিছু ম্যাচ আয়োজন করা হয় ওমানে এবং বাকি ম্যাচগুলো হয় আরব আমিরাতে । এই আসরে মোট ১২ দল অংশ নিয়েছিল এবং আসরটি হয়েছিল ১৭ অক্টোবর ২০২১ থেকে পরের মাস অর্থাৎ নভেম্বর এর ১৪ তারিখ পর্যন্ত । আসরটিতে প্রথমবারের মতো টি২০ শিরোপার দেখা পায় অস্ট্রেলিয়া এবং ফাইনালে তারা নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে শিরোপা নিজেদের করে নেয় ।
আসরটি মোট ২ দেশের ৪ শহরে ৪ ভেনুতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং এই গুলো হলোঃ-
১. ওমান ক্রিকেট একাডেমী, মাস্কাট ।
আরব আমিরাত
১. দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, দুবাই ।
২. শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়াম, শারজাহ ।
৩. শেখ জায়েদ স্টেডিয়াম, আবু ধাবী ।
আসরটির সেরা খেলোয়ার হন অজি ব্যাটার ডেভিড ওয়ার্নার এবং সবথেকে বেশি রান সংগ্রহক ছিলেন পাকিস্থানের বাবর আজম যিনি এই আসরে মোট ৩০৩ রান করেছিলেন এবং ১৬ উইকেট নিয়ে সেরা উইকেট শিকাড়ী ছিলেন শ্রীলঙ্কার হাসারাঙ্গা ।
২০২২ঃ- আগামি ১৬ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়াতে হতে চলেছে টি২০ বিশ্বকাপের ৮ম আসরটি । এই আসরটিতে খেলবে মোট ১৬ টি দল ৪৫ ম্যাচ এবং খেলা গুলো হবে অস্ট্রেলিয়ার মোট ৭ শহরের ৭ ভেনুতে ।
১৩ নভেম্বর ২০২২ এ মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড এ ফাইনালের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে আসরটি ।
0 মন্তব্যসমূহ